শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন
বিনোদন ডেস্ক : বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খান। যিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ‘বলিউড বাদশার’ পদটি ধরে রেখেছেন। দীর্ঘ এই ৩০ বছরে তার জনপ্রিয়তায় একটুও ভাটা পড়েনি। কীভাবে তিনি এই অসাধ্য সাধন করতে পারলেন, কেন বহু মানুষের আরাধ্য তারকা এই শাহরুখ খান?
শাহরুখ খানের ছবিগুলোর মতই তিনি রোমান্টিক ও আবেগপ্রবণ। ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের সবচেয়ে ভাল দিকগুলোকেই তিনি সর্বদা তুলে ধরেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার যা কিছু মহৎ – চলচ্চিত্রে তিনি তার মূর্ত প্রতীক।
ভারতে বাজার সংস্কারের লক্ষ্যে নেয়া একের পর এক পদক্ষেপের অংশ হিসাবে টেলিযোগাযোগ খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় বিদেশি বিনিয়োগের জন্য। এর ফলে নতুন নতুন মিডিয়া চ্যানেল ভারতে সম্প্রচারের অনুমতি পায়।
এই চ্যানেলগুলোতে সবসময় দেখানো হতো শাহরুখ খানের ছবি, তার গানের চিত্রায়ন এবং নানা সময় তার সাক্ষাৎকার। এই চ্যানেলগুলোর দৌলতেই তিনি পৌঁছে যান মানুষের ঘরে ঘরে। তার আগের যে কোনো চলচ্চিত্র তারকার চেয়ে তিনি অনেক বেশি মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
ভারতের অর্থনীতি আরও উদার হতে শুরু করলে নতুন নতুন সোডা-জাতীয় পানীয় এবং গাড়ি ভারতের বাজারে ঢুকতে শুরু করে। তারা শাহরুখ খানকে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনে ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ করে নেন। কারণ এই তারকার জনপ্রিয়তা তখন আকাশচুম্বী।
সেই অর্থে বলা যায়, দিল্লির এক সাধারণ পরিবারের সন্তান থেকে তারকাখ্যাতির শীর্ষে শাহরুখ খানের উল্কার গতিতে উঠে আসার রূপকথা কাহিনির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতের নব্য-উদারপন্থী অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্পও।
কোনরকম বংশ পরিচয়ের সুবাদে সিনেমায় ঢোকা বা চেনাজানাদের সঙ্গে খাতির ছাড়াও যে চলচ্চিত্রে বিপুল খ্যাতি অর্জন সম্ভব, শাহরুখ খানের উত্থান তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। তার উত্থান ঘটেছে দেশটির অর্থনীতির উত্থানের হাত ধরে।
অতীতে বহুত্ববাদী ও প্রগতিশীল যে পথে ভারত হেঁটেছে, দেশটিতে হিন্দুত্ব মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার পরও যারা ওই ধারাকে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করছেন – সেই ভারতীয়রা শাহরুখ খানকে একটা প্রতীক হিসাবে দেখেছেন।
শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানকে গত বছর মাদক সেবনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে প্রমাণের অভাবে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। অনেকেই বলেছিলেন ভারতের সবচেয়ে সফল মুসলিম আইকনকে টার্গেট করার জন্যই শাহরুখ খানের ছেলেকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল।
শাহরুখ সবসময়ই ভারতের বহুত্ববাদ নিয়ে সুচিন্তিত মতামত দিয়েছেন। তার সমসাময়িক অভিনেতাদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি ছবিতে মুসলিম চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
তারপরেও তার ভক্তদের কাছে কখনই তার ধর্মীয় পরিচয়টা বড় হয়ে ওঠেনি। তারা তাকে দেখেছেন জ্ঞানী, রসিক, সফল এবং ব্যাপকভাবে ‘সেক্সি’- যৌন আবেদনময় একজন পুরুষ হিসাবে।
শাহরুখ খান দক্ষিণ এশিয়ার রোমান্টিক সুপারহিরো – তার চলচ্চিত্রগুলোতে যে ‘দেশি’ রোমান্স উঠে এসেছে, তার সঙ্গে একাত্ম হবার, নিজের জীবনে সেই প্রেমকে অনুভব করার স্বপ্ন দেখেন দক্ষিণ এশিয়ার বহু তরুণ তরুণী।
অনিশ্চিত ও রূঢ় বাস্তবতার বিশ্বে, শাহরুখ খানের যে অসাধারণ ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে তা তার ভক্তদের জন্য চমৎকৃত হবার এবং একইসঙ্গে বিনোদনের জন্য একটা বিরল জায়গা তৈরি করে দিয়েছে।
তিন দশক ধরে অভিনয় করে যাওয়া এই সুপারস্টারের তিনটি বড় ছবি মুক্তি পাবে ২০২৩ সালে। তার ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন, কিন্তু মুসলিম আইকনদের এবং তাদের তৈরি ছবিকে টার্গেট করে দক্ষিণপন্থী সামাজিক মাধ্যম যেভাবে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে তাতে অনেকে শঙ্কিতও।